my stories

Sunday, 17 February 2013

আপাত নামহীন


প্রথম পর্ব 



 -“ তিয়া, রিসেপশান   তোর জন্য কল এসেছে
-“ ধুর, আমায় আবার কে কল করবে?”
-উফফ, গিয়ে দ্যাখ না
বিরক্ত হয়েই তিয়া নিচে নেমে আসে মোবাইল ফোন এর যুগে  কলেজ এর ল্যান্ড লাইন   কল, বিশ্ব টা কি উল্টা ঘোরা শুরু করল নাকি?
-“ হ্যালো
এর পর যা শুনল, তার জন্য তিয়া একদমই প্রস্তুত ছিল না। রিসিভার  নামিয়ে রেখে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে টেবিল ভর দিয়ে দাড়িয়ে রইল। এটা কি করে সম্ভব ? চিরকুটে  মাত্র লিখে রাখা  ঠিকানাটার দিকে তাকাল। বেশি দূরে না। মাথায় এক হাজার টা ভাবনা এসে অন্ধকার করে দিয়েছে। নাহ, এখানে দারিয়ে থেকে লাভ নেই।
আধা ঘণ্টার মাঝেই একটা ক্যাব নিয়ে পৌঁছে গেল। সেন্ট ভিনসেন্ট  হসপিটাল, সিডনি এদিক ওদিক জিজ্ঞেস করে আরও মিনিট সাতেক পরে নিজের গন্তব্যে। দূর থেকে  সাদা রঙের বেডে এক অতি পরিচিত অবয়ব দেখে বুক ঢিপ ঢিপ করা শুরু হয়ে গিয়েছে। শুয়ে থাকা ব্যাক্তি টি এখনো তিয়ার উপস্থিতির ব্যাপারে অজ্ঞাত  টিপ টিপ পায়ে বিছানার পাসে গিয়ে দাড়ায়  
-“ নিয়ন......


সাত দিন ধরে একটা বাজে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে পরে আছে নিয়ন। দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূর পরবাসে একা  আরও অনেক ছেলের মত বাঁচার  যুদ্ধে শামিয়ান। রোজকার মতো , রাস্তা পার হয়ে হট ডগ ভ্যান টার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো । হয়ত, রোজকার মতোই হট ডগ এ কামড় বসাতে বসাতে ফিরতি পথে রাস্তা পার করত এবং নিজের কাজের জায়গায় লাঞ্চ শেষে ফিরে যেত । কিন্তু সেদিনটি আর পাঁচটি  দিনের মত শেষ হল না। রাস্তায় দু পা বাড়াতেই  দুরন্ত গতিতে এগিয়ে আসা গাড়ি টা চকিতে ওকে ছিটকে ফুটপাতে  ফেলে দিল। এরপর সব অন্ধকার।
গ্যান ফিরতেই নিজেকে আবিষ্কার করলো বিশাল বড় একটা হল ঘরে, সারি সারি বিছানার 
  মাঝে।
-“  তিয়া?”
-“ তু তু তুমি, এখানে ?
-“এক্সিডেন্ট  হয়েছিল। পা ভেঙ্গে গেছে।“
-“ আমি তা দেখতে পারছি। কিন্তু আমার প্রশ্ন তা ছিল না। তুমি অস্ট্রেলিয়া তে ? তুমি অস্ট্রেলিয়া তে কি করছ? কবে এসেছ ? কেন এসেছ ?সারা পৃথিবীতে এত দেশ থাকতে তোমাকে এখানেই আসতে হল? পালিয়ে এসেও কি শান্তি দেবেনা তুমি আমায়? ”
এখানে একটু   ফ্ল্যাশব্যাক  নিতান্তই প্রয়োজনীয় ।  একসময় তিয়া এবং নিয়ন ছিল বেস্ট ফ্রেন্ড, হরিহর আত্মা , শৈশব, কৈশোর,যৌবনের সর্ব সঙ্গী  । নিয়ন বয়সে একটু বড়।  কিন্তু অই যে কথায় বলে না, একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মাঝে কখনই বন্ধুত্ব হতে পারেনা,তা প্রমাণ করতেই যেন নির্মল বন্ধুত্বের কোন এক অসংলগ্ন মুহূর্তে তিয়া নিয়নের প্রেমে পড়ে যায় । যেকোনো ত্রিকোণ প্রেমের  গল্পের মত, নিয়ন তখন কলেজের এক সুনয়নার প্রেমে হাবুডুবু খেতে ব্যস্ত এবং ফলস্বরূপ তিয়া প্রত্যাখ্যাত।
কষ্ট থেকে পালাতে তিয়া দেশ ছেড়েই পালাল সুদূর অস্ট্রেলিয়াএ। ভেবেছিলো out of sight..out of mind, একদিন হয়ত ভুলে যেতে পারবে ওই চেহারা টা কে। প্রতিদিন একটু একটু করে নিজের অনুভূতি গুলোকে অবশ করে নিচ্ছিল। কিন্তু আজ হাসপাতাল থেকে ফোন টার পর মনে হয়েছিল, এ জীবনে হয়ত শান্তি ওর কপালে নেই।



দুর্ঘটনার পর নিয়নের পকেট থেকে উদ্ধার হওয়া ডাইরি তে অনেক গুল ঠিকানা ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গোটা দশেক কল করে প্রায় হাল ছেড়েই দিয়েছিলেন। তিয়া চলে যাবার পর নিয়ন বিস্ময়ে  আবিষ্কার করলো ওর পৃথিবীটা যেন হতাশ করেই অন্ধকার হয়ে গেছে। পাগলের মত তিয়ার প্রতিটি বান্ধবীর কাছে ওর ঠিকানা ছেয়েছে । উদ্ভ্রান্তের মত ছুটেছে এদিক সেদিক তিয়ার ঠিকানার আশায় । হয়ত কেউই দিত না অকে ঠিকানা। অবশেষে তিয়ার মামাতো বোনের দয়া হল। নিয়ন দেরী করেনি আর। ডাইরির এক কোনায় লিখে রাখা ঠিকানার দিকে গত ছয় মাস যাবত নিয়ন তাকিয়েছে আর ভেবেছে, কি করে তিয়ার সামনে যাব । সাহস হয়নি। নিজেকে খুব ছোট মনে হত। আজ দু বছর পর মুখোমুখি দুজন।
-“ কি হল, হা করে তাকিয়ে আছ, উত্তর দিচ্ছ না কেন? এখানে তুমি করছ তা কি?”
-“ অনেক ধন্যবাদ আসার জন্য, তিয়া,”।
নিয়নের বিবর্ণ হাসিটার দিকে তাকাতেই তিয়ার হৃদয়ের জমাট বাঁধা অনুভূতিতে যেন সহসা হাতুড়ির ঘা  পড়ল ।  উশখ খুশক চুল, চোখের নিচে কালি, চুপসে যাওয়া গাল, কিছুই এতক্ষণ লক্ষ্য করেনি ও । পায়ে মোটা প্লাস্টার , স্ট্যান্ড এর সাথে ঝুলিয়ে দেওয়া। হতাশ করেই তিয়ার সব রাগ, হতাশা , গলে জল হয়ে গেল। পরম মমতায় এগিয়ে যায় ও ।
-“ তিয়া প্লীজ রাগ করিস না। ওরা আমার ডাইরি থেকে তোর  ঠিকানা পেয়েছিলো । আমি জানতাম না। আমার গ্যান  ছিল না যখন তোকে অরা ডেকেছিল । আমাকে আর হসপিটাল  এ রাখতে পারবে না। কিন্তু আমায় দেখাশোনার ভার কাউকে না দিয়ে অরা ডিস চার্জ অ করতে পারছে না। তিয়া, আই আম সরি, তুই চিন্তা করিস না। আমি, আমি, বাড়িতে খবর দেব।কেউ না কেউ ঠিক আমায় নিতে চলে আসবে। বড্ড ভুল হয়ে গেছে। এভাবে তোর সাথে দেখা হবে ভাবিনি। প্লীজ আমায় মাফ করে দে”
হরবরিয়ে এক নিঃশ্বাসে কথা গুল বলে যায় নিয়ন। তিয়া কিছুই শুনছিল না।  এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল একদা অসম্ভব পছন্দের মানুষটার দিকে।



দ্বিতীয় পর্ব

-ভেতরে এসো।
গুটি গুটি পায়ে  ঈষৎ ইতস্তত  নিয়ন তিয়ার পেছনে পেছনে ঘরে ঢোকে ।
-বস । আমি জল নিয়ে আসছি

2 comments: