my stories

Thursday, 17 January 2013

যবনিকা পতন


বাথরুম থেকে বেরিয়ে  আড়চখে কৃষ্ণা ড্রয়িং রুম এর  দিকে তাকায়।সোফায় বসে থাকা  মানুষ টা কে দেখতে পেয়ে বুকে একটা তিরতির কাঁপন ধরে গেল ওর।কতবার অপেক্ষা করেছে ও এই মুহূর্ত টার জন্য ? কত কল্পনাই না করেছিল। নাহ;  ভাবল,কল্পনা ছিল অনেক রঙ্গিন , অনেক মেলড্রমাটিক। সেই তুলনায় বুকের কাঁপন টা ছাড়া  বাস্তবের সাথে কোন সাদৃশ্যই খুঁজে পেলনা ও।
মানুষটা mobile   এতো ব্যস্ত কেন? একটু রাগ ই হয়ে গেল ওর। ছাড়,দৌড়ে   ভেতরের রুম ঢুকে যায় ড্রেস পরতে।আয়নায় মুখ টা দেখে। নাহ পছন্দ হছহে না।উফ, ভগবান তা এত দুষ্টু কেন? এত এত রূপসীদের বানাল, আর তাঁর ভাগে এত কম রূপ। কিন্তু কি আর করা, এখন দোষারোপ করে লাভ নেই। মানুষ তা বসে  আছে বাইরের ঘরে।গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় ও। উঁকি  মারে।আবার মানুষ টা ঘাড়  ঘোরায়।চব্বিশ টা দাঁত বের করা হাসি দেখে খুব সাবধানে বুকে আট কে থাকা নিঃশ্বাস টা বের করে দিল কৃষ্ণা। অনেক কিছু করতে ইছহে করে ওর। মানুষটির বুক  এ ঝাঁপিয়ে পরে গালে নাক ঘষে দিতে,গলায় এক হাতে বেড়  দিয়ে মানুষটার একমাথা চুল এলোমেলো করে দিতে...আর  অনেক কিছু। কিন্তু অর যেন  পা দুটি নড়বড়ে হয়ে গেছে।কিছু করলনা শেষ পর্যন্ত। শুধু এক চিলতে  হাসি দিয়ে একটা হাত তুলে নিঃশব্দে hi  বলল।
অপর-প্রান্তে বিছানায় কৃষ্ণার পিসি  বসেছিলেনকৃষ্ণা কে আসতে দেখেই দাড়িয়ে  বললেন “কোথায়  যাওয়া হবে এখন দুজনের?”তড়িতে কৃষ্ণার চমক ভাঙে বোকার মত মানুষটার দিকে তাকায়।আবার সেই হাসি। রোম দারিয়ে যায় অমন বাচ্চাদের  মত হাসিটা দেখলে।“এই  তো  ওকে নিয়ে একটু ঘুরে বেড়াব এইখানেই। আপনি চিন্তা করবেন  না। ঠিক  সময়ে  আপনাদের   মেয়ে কে  ফেরত দিয়ে যাবো”।দুজনেই জুতো পরে বেরিয়ে যায় 

কৃষ্ণা যখন মানুষ  টা কে পেছন থেকে দেখেই যাচ্ছিল তক্ষুনি হটাত  মানুষ টা ঘুরে  দারিয়ে বলে,so many years, not even a single hug?অপ্রস্তুতের মত এগিয়ে  যায়। কিন্তু যা ভেবেছিল তাই। সেই আগের মতই মানুষটি গলে বেরিয়ে গিলে হেসে একটা ভেংচি  কেটে  দেয়। এতক্ষণে  কৃষ্ণার বিশ্বাস হয়, স্বপ্ন না, সত্যিয়ে সে অবশেষে তার অসম্ভব প্রিয়  মানুষটির সামনে দাড়িয়ে  আছে skype  আর জিমেইল এর ইমেজ টা এখন একটা রক্ত মাংসের মানুষ,ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড এর পার্থ এখন ওর দিকে হাসি  হাসি মুখে হাত টা  বারিয়ে এক সিঁড়ি নীচে দাড়িয়ে  আছেকৃষ্ণা ছোট্ট লাফ মেরে পার্থর কনুই   ধরে।
পার্থ এবং কৃষ্ণা, ফেসবুক বন্ধু। মিশিগান  ইউনিভার্সিটি র এক কনে বিশাল বড়  ল্যাব আর  এককোণায়  বসা কৃষ্ণার  দিন যেমন টি শুরু হয় তেমনিয়ে সেদিন হয়েছিল। প্রতিদিন সকালে এসে  কাজ শুরু করার আগে যেমন ফেসবুক চেক করে তেমনি করছিল। ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট  এ দেখল নতুন মুখ। mutual ফ্রেন্ড এও কেউ নেই। ভাবল reject করে দেয়। কিন্তু দিল না। কারণটি কি ছিল মনে পরে না ওর। শুধু দেখেছিল ছেলেটি কলকাতার কৃষ্ণা ভালনাম কৃষ্ণচূড়া চৌধুরী, বাঙ্গালি হলেও স্পর্শ পায় নি বাঙলার মাটির এই পঁচিশটি বসন্তে । ফেসবুক এর নিরানব্বই শতাংশ বন্ধুই  আমেরিকান এবং কাজের সূত্রেৃথিবীর   বিভিন্ন জায়গার। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও বাঙালি বন্ধু জোটে  নি। বিদেশে বড়  হলেও চমৎকার বাঙালি টানদুর্গাপূজা পছন্দ, পছন্দ শরৎচন্দ্র। সেই মেয়ের এখন বাঙালি বন্ধু নেই, বিশ্বাস করাটা কঠিন 
পার্থ দে  বিশাল বর সফটওয়্যার কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার । বিদেশে  যাবার সুযোগ  অনেক থাকা সত্ত্বেও দেশ ছেড়ে জেতে অপারগ।তাই দেশে সবচেয়েড়  প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে আরামে আয়েশে দিন কাটায়। ফেসবুক পোকা ঠিক নয়।কিন্তু সেদিন সার্ফ করতে করতে ক্কৃষ্ণচূড়াপ্রোফাইল গিয়ে আআন্মনেই কতকটা অ্যাড ফ্রেন্ড করে দিয়েছিল।তারপর  থেকেই শুরু হল ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড এ ওদের পথচলা ।

দিনের পর দিন নানান  কথা বলায় কেটে  যায়। প্রথমে ছবি দেখেই সন্তুষ্ট হতে হয়েছিল। একদিন জিমেইল ভিডিও তে দেখা। কাজের চাপে ,কখন অভিমান কথা হয়ত মাসের পর মাস বন্ধ।কিন্তু তাও যেন কোথায় একটা সূক্ষ্ম টান রয়ে যায় 
অবশেষে একদিন সুযোগ হয় কৃষ্ণার মানুষ টি কে  দেখার টান-যখন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উথল,অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একদিন ভারত   আসার প্লান বানিয়ে ফেলল মা কে  নিয়ে।জন্মভূমি দেখার বাহানা আর কি।

দেশে পা দিতেই অসম্ভব রোমাঞ্চ  শারা শরীর জুড়েএত কাছে এসে গেল ও? যেন পার্থের স্পর্শ  আকাশে বাতাসে। পার্থ  ছিল তখন কর্মসূত্রে ব্যাঙ্গালর  । গাড়ি ধরেছে  কলকাতা  পৌঁছানর। চারদিনের  ছুটি। সারে চার বছরের online বন্ধুত্বের যবনিকা পতন হবে। হবে মুখোমুখি দেখা । কেন জানিনা অদ্ভুত লাগছে কৃষ্ণার ।
“চল তোমায় কলকাতা  দেখাই”-পার্থের ডাকে ফিরে তকায় ও।নাহ  শহর   দেখার বিন্দুমাত্র ইছহে নেই ।আজ এত টা  পথ পাড়ি  দিয়ে এসেছে শুধু মানুষটার হাত ধরে হেঁটে যাওয়ার জন্য কি করে বোঝাবে।“চল যেখানে নিতে চাও”।
প্দুদিন যে  কি করে কেটে গেল অর সাথে সকাল বিকেল ঘুরে , নানা জায়গা দেখে। কথা ঠিক  মত বলা হয়ে ওঠেনি।ভিক্টোরিয়া এ  পাশে বসে  পার্থের কাঁধে মাথা রেখে  যখন আয়েশে চোখ বুজেছিল ও  ,তখন পার্থের ফিসফিস শুনল “ will u hold my hand, will u be mine forever?” চমকে তাকাল  পার্থের দিকে। ঠাট্টা করছে কি? নাহ, ঠাট্টার ত কন ছিনহই নেই মুখে। খুব  ভালভাবে দেখল । হটাত এ বুঝতে পারল সেই জীবনের সেই সন্ধিক্ষণ এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে virtual ওয়ার্ল্ড আর হাসি মশকরা চলে না। পার্থের বাড়ান হাত টা দেখে খুব লোভ হল। পার্থ তাকিয়ে ছিল নির্নিমেষে।
কিছুক্ষণ শুধু তাকিয়েই থাকে  কৃষ্ণা। পার্থ যা বলছে সে ত শোনার জন্য এতোগুলো বছর অপেক্ষা করে ছিল।মনের কোনও এক কোণে ওই শব্দগুলি শোনার জন্য কি আকুপাকু করত না? কিন্তু  আজ এ কি হল ওর ? বাড়িয়ে থাকা হাত যে  ওকে জীবনের সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে  ফেলল।
পার্থ মা বাবার একমাত্র  সন্তান। বাবা জীবিত নন।   মা আর ও।অনেক স্বপ্ন ওর মায়ের, ছেলে চাকরি করবে, অনেক বড় হবে আর তখন লাল  টুকটুকে বউ আনবে, নাতি নাতনি তে এত বছরের একাকীত্ব শেষ হবে। দু তিন টে বাইরে কাজ করার বড় অফারের  প্রত্যাখ্যান করার পেছনেও একটাই কারণ বারবার। মা যাবেন না বাইরে নিজের বাড়ি  ছেড়ে । দেশের মা টি  তেই , দেশের মানুষের সাথেই শেষ পর্যন্ত থাকতে চান। পার্থের ও কখন আপ্সস হয় না ।কৃষ্ণা দোষ  দিতে পারে না। কিন্তু পার্থ আর  ওর মায়ের ওই  সমীকরণ এর  সমান চিহ্নের কোন  পাশে তার অবস্থান সেটা এত বছর ভেবেও বের করতে না পেরে হাল ছেরে শুধু বন্ধুত্বে মন বসিয়েছিল। আমেরিকায় বর হয়ে ওঠা, আত্মনির্ভর carrear সচেতন কৃষ্ণার জন্য ইন্ডিয়ায়   সেটল  করা  অভাবনীয়...।চিন্তা করতে গেলেই উত্তর খুঁজে না পেয়ে হৃদয় এড়িয়ে যেত। যে প্রশ্ন নিয়ে আজ পার্থ তার দিকে তাকিয়ে সে প্রশ্ন কি এতগুলো বছর কৃষ্ণা নিজেকে করেনি?

“কি ভাবছেন madam? কথা বলব মায়ের সাথে?” ঠোঁটের কোনে এক চিলতে  হাসি নিয়ে  পার্থ ওর বাতাসে এলোমেলো চুল গুলো সরায় ।বাড়ান হাত এখন ওর হাতের মুঠোয়।কিন্তু ধরতে কেন পারছে না কৃষ্ণা শক্ত করে?
“ তোমার মা কে  কি আমেরিকা আসার জন্য বোঝানো যায় না?”  মাথা  নিচু করে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল কৃষ্ণা।
মুহুরতে হাত টা  আলগা হয়ে গেল। করুন দুটো চোখ তুলে কৃষ্ণা যখন তাকাল পার্থের দিকে তখন পার্থের ভরতশনা ভরা দৃষ্টি ছাড়া কিছুই দেখল না আর। যেন বলছে, সবকিছু জেনেও কি করে কৃষ্ণা ওকে ওই অনুরধ করল? মরমে মরে যায় কৃষ্ণা। দুচোখে শ্রাবণের ধারা।পার্থ উঠে দাড়ায় ।“চল, বাসায় ছেড়ে  আসি তোমায়”। কৃষ্ণার সাহস হয় না  অই হাত টা ধরে আর টানতে।

বালিশ ভিজে জবজবে। মোবাইল এ   মেসেজ আর টিং টিং শব্দে মুখ ফিরিয়ে অতি চেনা একটা নাম্বার দেখে  heartbeat প্রবল ।পার্থ ।“ কৃষ্ণা, অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমায় নিয়ে। ।কিন্তু আমি মনে হয় শুধু আমার জীবন কেই বড়  করে দেখছি। তোমার ইচ্ছে অনিচ্ছে দেখিনি।আজ মনে হল এত বড়  selfish কিকরে হলাম? আমি তোমাকে  চাই ।কিন্তু আমি পারব না মা কে  কষ্ট দিতে। আমায় ক্ষমা কর”।
মোবাইল টা কে  শক্ত করে বুক এ চেপে  ধরে হু হু করে কেঁদে ওঠে কৃষ্ণা।কেন এসেছিল ও একটা অসম্ভব স্বপ্ন ক তাড়া  করে এত দূর থেকে?নিজেকে খুব স্মার্ট মেয়ে ভাবত ।  আজ নিজেকে নিঃস্ব ছাড়া কিছু মনে হছহে না। মনে হছহে কেউ যেন ওকে ওর  শিকড় টেনে  উপড়ে ফেলেছে। প্রচণ্ড ইছহে করছিল নিজেকে বিলীন করে দিয়ে মানুষটার বুকে মিশে গিয়ে বলতে “ আমি এসেছি, আমি থাকব, চিরজীবন তোমার  হাত ধরে”। কিন্তু বাস্তবতা ........ .শূন্য চোখে জানার বাইরে তাকিয়ে থাকে কৃষ্ণা। আর একদিন দিন পরে ওর flight। 

2 comments:

  1. Next is what?
    Might be happy ending....:-)

    ReplyDelete
  2. thank you for appreciating my effort.you myt wanna read " udashin ami". and my stories nvr hav happy ending, coz life is hardly about happy ending :D

    ReplyDelete