my stories

Wednesday, 12 July 2017

Young mothers

I was travelling by auto yesterday .A  lady boarded with a little baby in her arms.
I like watching kids and their antics though I am yet to have one of my own. Once she had settled down I caught a glimpse of her face. To my surprise , she was not a lady but just a teenager barely of 15 or 16. What startled me the most was the sadness, despondency and despair in her eyes. I am 30 years old,married and yet feel puerile  when it comes to the prospect of having a baby. And there she sat with a 6 months old on her lap. Her calm,dejected exterior filled me with sorrow. She is playing the role of a mother to a baby when it should be the  other way round.

In our country  marriage isn't for 2people to come together ,bond and share happiness. The principal reason rather becomes procreation. Once a girl gets married,she is hounded by almost every people around her to start a family. Women,in this patriarchal society already are denied a gamut of basic rights, marriage just confiscates few more .

Sunday, 17 February 2013

আপাত নামহীন


প্রথম পর্ব 



 -“ তিয়া, রিসেপশান   তোর জন্য কল এসেছে
-“ ধুর, আমায় আবার কে কল করবে?”
-উফফ, গিয়ে দ্যাখ না
বিরক্ত হয়েই তিয়া নিচে নেমে আসে মোবাইল ফোন এর যুগে  কলেজ এর ল্যান্ড লাইন   কল, বিশ্ব টা কি উল্টা ঘোরা শুরু করল নাকি?
-“ হ্যালো
এর পর যা শুনল, তার জন্য তিয়া একদমই প্রস্তুত ছিল না। রিসিভার  নামিয়ে রেখে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে টেবিল ভর দিয়ে দাড়িয়ে রইল। এটা কি করে সম্ভব ? চিরকুটে  মাত্র লিখে রাখা  ঠিকানাটার দিকে তাকাল। বেশি দূরে না। মাথায় এক হাজার টা ভাবনা এসে অন্ধকার করে দিয়েছে। নাহ, এখানে দারিয়ে থেকে লাভ নেই।
আধা ঘণ্টার মাঝেই একটা ক্যাব নিয়ে পৌঁছে গেল। সেন্ট ভিনসেন্ট  হসপিটাল, সিডনি এদিক ওদিক জিজ্ঞেস করে আরও মিনিট সাতেক পরে নিজের গন্তব্যে। দূর থেকে  সাদা রঙের বেডে এক অতি পরিচিত অবয়ব দেখে বুক ঢিপ ঢিপ করা শুরু হয়ে গিয়েছে। শুয়ে থাকা ব্যাক্তি টি এখনো তিয়ার উপস্থিতির ব্যাপারে অজ্ঞাত  টিপ টিপ পায়ে বিছানার পাসে গিয়ে দাড়ায়  
-“ নিয়ন......


সাত দিন ধরে একটা বাজে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে পরে আছে নিয়ন। দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূর পরবাসে একা  আরও অনেক ছেলের মত বাঁচার  যুদ্ধে শামিয়ান। রোজকার মতো , রাস্তা পার হয়ে হট ডগ ভ্যান টার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো । হয়ত, রোজকার মতোই হট ডগ এ কামড় বসাতে বসাতে ফিরতি পথে রাস্তা পার করত এবং নিজের কাজের জায়গায় লাঞ্চ শেষে ফিরে যেত । কিন্তু সেদিনটি আর পাঁচটি  দিনের মত শেষ হল না। রাস্তায় দু পা বাড়াতেই  দুরন্ত গতিতে এগিয়ে আসা গাড়ি টা চকিতে ওকে ছিটকে ফুটপাতে  ফেলে দিল। এরপর সব অন্ধকার।
গ্যান ফিরতেই নিজেকে আবিষ্কার করলো বিশাল বড় একটা হল ঘরে, সারি সারি বিছানার 
  মাঝে।
-“  তিয়া?”
-“ তু তু তুমি, এখানে ?
-“এক্সিডেন্ট  হয়েছিল। পা ভেঙ্গে গেছে।“
-“ আমি তা দেখতে পারছি। কিন্তু আমার প্রশ্ন তা ছিল না। তুমি অস্ট্রেলিয়া তে ? তুমি অস্ট্রেলিয়া তে কি করছ? কবে এসেছ ? কেন এসেছ ?সারা পৃথিবীতে এত দেশ থাকতে তোমাকে এখানেই আসতে হল? পালিয়ে এসেও কি শান্তি দেবেনা তুমি আমায়? ”
এখানে একটু   ফ্ল্যাশব্যাক  নিতান্তই প্রয়োজনীয় ।  একসময় তিয়া এবং নিয়ন ছিল বেস্ট ফ্রেন্ড, হরিহর আত্মা , শৈশব, কৈশোর,যৌবনের সর্ব সঙ্গী  । নিয়ন বয়সে একটু বড়।  কিন্তু অই যে কথায় বলে না, একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মাঝে কখনই বন্ধুত্ব হতে পারেনা,তা প্রমাণ করতেই যেন নির্মল বন্ধুত্বের কোন এক অসংলগ্ন মুহূর্তে তিয়া নিয়নের প্রেমে পড়ে যায় । যেকোনো ত্রিকোণ প্রেমের  গল্পের মত, নিয়ন তখন কলেজের এক সুনয়নার প্রেমে হাবুডুবু খেতে ব্যস্ত এবং ফলস্বরূপ তিয়া প্রত্যাখ্যাত।
কষ্ট থেকে পালাতে তিয়া দেশ ছেড়েই পালাল সুদূর অস্ট্রেলিয়াএ। ভেবেছিলো out of sight..out of mind, একদিন হয়ত ভুলে যেতে পারবে ওই চেহারা টা কে। প্রতিদিন একটু একটু করে নিজের অনুভূতি গুলোকে অবশ করে নিচ্ছিল। কিন্তু আজ হাসপাতাল থেকে ফোন টার পর মনে হয়েছিল, এ জীবনে হয়ত শান্তি ওর কপালে নেই।



দুর্ঘটনার পর নিয়নের পকেট থেকে উদ্ধার হওয়া ডাইরি তে অনেক গুল ঠিকানা ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গোটা দশেক কল করে প্রায় হাল ছেড়েই দিয়েছিলেন। তিয়া চলে যাবার পর নিয়ন বিস্ময়ে  আবিষ্কার করলো ওর পৃথিবীটা যেন হতাশ করেই অন্ধকার হয়ে গেছে। পাগলের মত তিয়ার প্রতিটি বান্ধবীর কাছে ওর ঠিকানা ছেয়েছে । উদ্ভ্রান্তের মত ছুটেছে এদিক সেদিক তিয়ার ঠিকানার আশায় । হয়ত কেউই দিত না অকে ঠিকানা। অবশেষে তিয়ার মামাতো বোনের দয়া হল। নিয়ন দেরী করেনি আর। ডাইরির এক কোনায় লিখে রাখা ঠিকানার দিকে গত ছয় মাস যাবত নিয়ন তাকিয়েছে আর ভেবেছে, কি করে তিয়ার সামনে যাব । সাহস হয়নি। নিজেকে খুব ছোট মনে হত। আজ দু বছর পর মুখোমুখি দুজন।
-“ কি হল, হা করে তাকিয়ে আছ, উত্তর দিচ্ছ না কেন? এখানে তুমি করছ তা কি?”
-“ অনেক ধন্যবাদ আসার জন্য, তিয়া,”।
নিয়নের বিবর্ণ হাসিটার দিকে তাকাতেই তিয়ার হৃদয়ের জমাট বাঁধা অনুভূতিতে যেন সহসা হাতুড়ির ঘা  পড়ল ।  উশখ খুশক চুল, চোখের নিচে কালি, চুপসে যাওয়া গাল, কিছুই এতক্ষণ লক্ষ্য করেনি ও । পায়ে মোটা প্লাস্টার , স্ট্যান্ড এর সাথে ঝুলিয়ে দেওয়া। হতাশ করেই তিয়ার সব রাগ, হতাশা , গলে জল হয়ে গেল। পরম মমতায় এগিয়ে যায় ও ।
-“ তিয়া প্লীজ রাগ করিস না। ওরা আমার ডাইরি থেকে তোর  ঠিকানা পেয়েছিলো । আমি জানতাম না। আমার গ্যান  ছিল না যখন তোকে অরা ডেকেছিল । আমাকে আর হসপিটাল  এ রাখতে পারবে না। কিন্তু আমায় দেখাশোনার ভার কাউকে না দিয়ে অরা ডিস চার্জ অ করতে পারছে না। তিয়া, আই আম সরি, তুই চিন্তা করিস না। আমি, আমি, বাড়িতে খবর দেব।কেউ না কেউ ঠিক আমায় নিতে চলে আসবে। বড্ড ভুল হয়ে গেছে। এভাবে তোর সাথে দেখা হবে ভাবিনি। প্লীজ আমায় মাফ করে দে”
হরবরিয়ে এক নিঃশ্বাসে কথা গুল বলে যায় নিয়ন। তিয়া কিছুই শুনছিল না।  এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল একদা অসম্ভব পছন্দের মানুষটার দিকে।



দ্বিতীয় পর্ব

-ভেতরে এসো।
গুটি গুটি পায়ে  ঈষৎ ইতস্তত  নিয়ন তিয়ার পেছনে পেছনে ঘরে ঢোকে ।
-বস । আমি জল নিয়ে আসছি

Sunday, 3 February 2013

ঘোর তমসা




১।
এক মাথা ঢেউ খেলানো চুললম্বাটে মুখছোট্ট এক জোড়া গভীর চিন্তামগ্ন চোখ ,টিকালো নাকে আলো আধারির খেলাপাতলা দুটি ঠোঁট 
অনেকক্ষণ ধরেই ছবিটার দিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে তমসা  অসাধারণ কিছু নয় ছবির চেহারাটা  একটু বেশী সময় নিয়ে তাকালে খুব সাবধানে মুখের খাঁজে লোকানো আবছা  নিষ্ঠুরতা ভেসে ওঠে  নিষ্পাপ চোখের তারায় ক্রূর ঝিলিক। এগুলো গড়পড়তা মানুষের নজর এড়িয়ে যাবে। সাধারণ মানুষের জন্য চেহারাটা  একটি অতি সহৃদয় মানুষের    এই চেহারার প্রতিটি পরতের সাথে পরিচিত   বহুদিন ধরেবহু বছর ধরে। মুখের মাংসপেশিতে জমে থাকা নিষ্ঠুরতার প্রতিটি স্তরের সাথে পরিচিত  মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষে মৃদু আলোড়ন ছড়ায়   থেকে থেকে শিউরে ওঠে মাঝেমাঝেই। প্রচণ্ড  ইচ্ছে হয় পালিয়ে যেতে  চেহারা টা থেকে । পারেনা।  কেমন একটা অদৃশ্য বাঁধনে বাঁধা পড়ে গেছে। পুরনো ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি হয়। পুরাতন ক্ষত থেকে আবার হয়  রক্তক্ষরণ তবুও কোন এক অমোঘ আকর্ষণে নির্নিমেষে তাকিয়েই থাকে ও।
ল্যাপটপ বন্ধ করে একপাশে সরিয়ে রাখে ।এক মিনিট, দু মিনিট । আরচখে একবার তাকায় বন্ধ ল্যাপটপ টার দিকে। নিজেকে শাসন করে। ঘড়ির কাটা ঘুরে চলে ...এক সেকন্দ দু সেকন্দ...অবশেষে হার মানে। মনিটর এ ছবিটা ভেসে উঠতেই সশব্দে নিজের গালে চড় মারল এবার । কোন ব্যথার অনুভূতি হয়না। আবার মারে। ক্রমাগত শপাটে মেরেই চলে। অবশেষে একসময় ক্লান্ত হয় ।  লালচে হয়ে যাওয়া আঙুলের প্রান্ত ছুঁয়ে  জেতে থাকে মানুষটির চোখ , নাক, গাল, ঠোঁট , চিবুক ...
২।
“বিপ” হালকা চাপ দিতেই  ইনবক্স এ বসে থাকা মেসেজ খুলে গেল।
“ লাঞ্চ করে নিও। লাভ ইয়উ”
ছোট্ট বার্তা । শেষের দুটো শব্দের দিকে চোখ বোলায় । ফোনের অপর প্রান্তে বসে থাকা মানুষটা অপেক্ষা করবে প্রতিউত্তরের । কি প্যাড এ চাপ দিয়ে লিখতে থাকে তমসা ।
“ ঠিক আছে” ।
সেন্ড ।
তিনটে শব্দের প্রতীক্ষায় কত প্রহর কেটে গেলো অরূপের । যদিও ওই তিনটি শব্দের  অনুপস্থিতিতে কিছুই আটকে থাকেনি। প্রথমবার তমসার ডান হাত ধরে নিজের বুকের উপর   যেদিন রেখেছিল, কাঁপা কাঁপা স্বরে উচ্চারণ করেছিল ভালবাসি ,  তমসা কিছুক্ষণ এক দৃষ্টি তে ছেয়েছিল । কি ছিল সেদিন ওই টানা দু চোখে? মাথা চেপে ধরে দুহাতে উত্তরের সন্ধানে । কিছুই মনে পরে না। কিছুই উদ্ধার হয়না সে চোখের ভাষার ।  মনে পরে শুধু দিনের পর দিন রাতের পর রাত অলীক কল্পনায়  যে অধরে  আকণ্ঠ ডুবে জাওয়ার স্বপ্ন দেখে দিন কাটাতে হয়েছিল তার অপ্রত্যাশিত স্পর্শ ।  তমসার ঠোঁট নিজের ঠোঁটের ওপর আবিষ্কার করে অভিভূত হয়ে পরেছিল।    তমসা যে প্রতিউত্তর দেয়নি মনেই ছিলনা। গতানুগতিক ভাবে জীবন এগিয়ে গেছে দুজনের। ঘনটার পর ঘনটা কেটে যায় ফোনের দু প্রান্তে প্রেমিক প্রেমিকার মত ভবিষ্যতের  পরিকল্পনায় । হাজার  কথার ভিড়েও অরূপ খোঁজ পায়, কিছু একটা নেই। হাতড়ে বেড়ায় ... আচমকা বজ্রপাতের মতই  উপলব্ধি... তমসা আজো বলেনি  ...“ভালবাসি”।

৩।
জানালা দিয়ে প্লেনটাকে উড়ে যেতে দ্যাখে পিয়ুশ। দুহাত প্যান্ট এর দু পকেটে গোঁজা , ক্লান্ত দেহের ভারে  ঈষৎ ন্যুজ মেরুদণ্ড ,  আঙুলের সমান প্লেনটা  ছোট্ট বিন্দু হয়ে মেঘের মাঝে মিশে যেতেই ঘুরে দাড়ায় । প্রচুর কাজ জমে গেছে অফিসের । আজ শেষ করতেই হবে একে একে। প্লেন এর ল্যাজ এ কি যেন লেখা ছিল? মনে করতে পারে না। ফাইল  এর অক্ষর গুলো অবোধ্য লাগছে। টাই এর বাঁধন সামান্য আলগা করে দিল। আশেপাশের কেউবিকেল গুলি সব একে একে খালি হয়ে যাচ্ছে । পিয়ুশের সামনে ফাইলের মিনি পর্বত ।
“ম্মম্মম, আজ কাজ না করলেই নয়? আমাকে যে কথা দিয়েছিলে ঘোরাবে”? কানের লতিতে   তমসার উষ্ণ পেলব ওষ্ঠের স্পর্শ । আবেশে চোখ বুজে আসে পিয়ুশের ।  তমসার  দুহাতের নরম বেষ্টনীতে জড়িয়ে থাকা গলাকে মুক্ত করে হাত বাড়িয়ে  পেছন থেকে টেনে নিয়ে আসতে চেষ্টা করে ওর মুখ।
“ আই পিয়ুসদা, এই দাদা, একি পড়ে গেলেন কিকরে হতাথ? লাগেনি তো”?
“ইশ ইশ, উঠুন উঠুন”।
 দিশেহারা ভাবে চারদিকে তাকায় , চেয়ার থেকে পরে গেছে পিয়ুশ। তমসা ? নেই, কেউ নেই।
কেঁদে ফেলেছিল তমসা ফোনে হু হু করে।
“এমন কেনও করছ? প্লীজ , আমি কালই চলে যাব , একটিবার দেখা কর” । মিনতিভরা কণ্ঠস্বর ।নিজেকে আবেগপ্রবণ হওয়া থেকে আটকেছে  পিয়ুশ। শক্ত মুখে না বলেছে। আরও একবার ভুল করতে পারবে না সে। অসম্ভব প্রেমের কষ্ট সে জানে। আরও একবার অসম্ভব কে তাড়া করে প্রেমের খোঁজ করার বিলাসিতা দেখাতে পারবে না সে।
তমসার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তের  স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় ।  তমসার পাখির বুকের মত নরম শরীর , মিশে যেত ওর বুকে, দুহাতে  শক্ত ভাবে আঁকড়ে থাকতো , যেন এখুনি পালিয়ে যাবে পিয়ুশ। নিজের অনুভূতির মুখোমুখি হতেই ভয় পেল প্রথমবার। দূর দেশের  অতিথি পাখি তমসা । শীত শেসেই ফিরে যাবে নিজের আস্তানায়। ফেলে রেখে যাবে শুধু কিছু স্মৃতি । তীব্র আশ্লেষে তমসার অধরে বিলীন হতে হতেও নিজের অস্তিত্বের প্রতিটি বিন্দুকে তিরস্কার করেছে।
সফল হয়েছিলো । তমসার আবেগের কাছে হার মানেনি। না হার মেনেছে নিজের আবেগের কাছে। অস্বীকার করেছে বারবার নিজের অনুভূতিকে। হ্যাঁ , সে ভালবাসে ।শরীরের প্রতিটি কোষে সুতীব্র হাহাকার ওঠে , তারা চীৎকার করে, আবেদন জানায়। কিন্তু মস্তিষ্ক পর্যন্ত সে আবেদন প্রসারিত হয়না।  পিয়ুশ চেতনাহীন , মুক, বধির।   
“তুমি এত কষ্ট কেন দাও আমায়”?
কি বলবে পিয়ুশ? কষ্ট ছাড়া  যে আর কিছুই দেওয়ার নেই।

৪।
পিঙ্ক রঙের ১০০ টা গোলাপের তোরা হাতে নিয়ে তমসা বসে আছে। সামনে হাঁটু গেড়ে অরূপ।
হাঁটুতে ভর দিয়ে তমসার সমান্তরালে এসে হালকা চুমু এঁকে  দিল ঠোঁটে ।
“হ্যাপি আনিভারসারি সুইটু । লাভ ইয়উ আমার সোনা”।
“সেম টু ইয়উ হানি”। তমসা হাসি মুখে চুমু ফিরিয়ে দিতে দিতে বলল।
অরূপ প্রচণ্ড আশা করেছিল তিনটে শব্দ শোণার । বিষণ্ণ দৃষ্টিতে চোখ  রাখে তমসার চোখে ।
“ কি হয়েছে অরূপ? এমন কেন দেখাচ্ছে তোমায়? আজ অফিসে কিছু হয়েছে বুঝি”?
তমসাকে সমস্ত শক্তি দিয়ে ভীষণভাবে ঝাঁকাতে ইছহে হয় অরূপের । ইচ্ছে হয়, চীৎকার করে বলতে, তুমি কি অন্ধ তমসা ? তুমি কি মানসিক ভাবে পঙ্গু? তুমি কি কিছুই বোঝো না? তিলে তিলে কিকরে আমার মৃত্যু হচ্ছে প্রতিদিন? আমি কি এতটাই অযোগ্য তোমার ভালবাসার  যে তোমার মুখ দিয়ে আজো ভালবাসি শব্দটা উচ্চারিত হল না?
“আই লাভ ইয়ু ড্যাম ইট । I so fucking love you.”
বিকারগ্রস্ত রোগীর মত চীৎকার করেই যাচ্ছে অরূপ ।  দিক্বিদিক শূন্য হয়ে কখন যে নিজের স্বগতোক্তি জিহ্বার ফাঁক দিয়ে ভাষায় পরিণত হয়েছে জানেনা । তমসা এখনো সোফায় বসা , চিত্রার্পিত । শুধু নীরবে ঝরে যাচ্ছে অশ্রুজল ।
ঘরের এক কোণ থেকে ছুটে এসে তমসার সামনে হাঁটু ভেঙে পরে গেল। তমসার দুপা হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে উরুর উপর মাথা রেখে হু হু করে কেঁদে উঠলো ।
“একটিবার তম, শুধু একটিবার বল ভালবাসি , আর কিচ্ছু চাইনা , এ জগতের  সব সুখ তোমার পায়ে সমর্পণ করবো , সুধু একটিবার বল, ভালবাসি”।
তমসার অন্তরাত্মা প্রবলভাবে কেঁপে ওঠে । অনেক পুরনো ঘটনা মনে পরে যায়...
“ একটিবার বল পিয়ুশ। আমি জানি তুমিও আমায় ভালোবাসো । তবুও আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই । প্লীজ পিয়ুশ”।
এক মাথা ঢেউ খেলানো চুললম্বাটে মুখছোট্ট এক জোড়া গভীর চিন্তামগ্ন চোখ ,টিকালো নাকে আলো আধারির খেলাপাতলা দুটি ঠোঁট...নীরব , নিথর।
অন্ধকার ঘরে তমসা  আর অরূপ কেঁদেই চলে ....





Thursday, 17 January 2013

যবনিকা পতন


বাথরুম থেকে বেরিয়ে  আড়চখে কৃষ্ণা ড্রয়িং রুম এর  দিকে তাকায়।সোফায় বসে থাকা  মানুষ টা কে দেখতে পেয়ে বুকে একটা তিরতির কাঁপন ধরে গেল ওর।কতবার অপেক্ষা করেছে ও এই মুহূর্ত টার জন্য ? কত কল্পনাই না করেছিল। নাহ;  ভাবল,কল্পনা ছিল অনেক রঙ্গিন , অনেক মেলড্রমাটিক। সেই তুলনায় বুকের কাঁপন টা ছাড়া  বাস্তবের সাথে কোন সাদৃশ্যই খুঁজে পেলনা ও।
মানুষটা mobile   এতো ব্যস্ত কেন? একটু রাগ ই হয়ে গেল ওর। ছাড়,দৌড়ে   ভেতরের রুম ঢুকে যায় ড্রেস পরতে।আয়নায় মুখ টা দেখে। নাহ পছন্দ হছহে না।উফ, ভগবান তা এত দুষ্টু কেন? এত এত রূপসীদের বানাল, আর তাঁর ভাগে এত কম রূপ। কিন্তু কি আর করা, এখন দোষারোপ করে লাভ নেই। মানুষ তা বসে  আছে বাইরের ঘরে।গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় ও। উঁকি  মারে।আবার মানুষ টা ঘাড়  ঘোরায়।চব্বিশ টা দাঁত বের করা হাসি দেখে খুব সাবধানে বুকে আট কে থাকা নিঃশ্বাস টা বের করে দিল কৃষ্ণা। অনেক কিছু করতে ইছহে করে ওর। মানুষটির বুক  এ ঝাঁপিয়ে পরে গালে নাক ঘষে দিতে,গলায় এক হাতে বেড়  দিয়ে মানুষটার একমাথা চুল এলোমেলো করে দিতে...আর  অনেক কিছু। কিন্তু অর যেন  পা দুটি নড়বড়ে হয়ে গেছে।কিছু করলনা শেষ পর্যন্ত। শুধু এক চিলতে  হাসি দিয়ে একটা হাত তুলে নিঃশব্দে hi  বলল।
অপর-প্রান্তে বিছানায় কৃষ্ণার পিসি  বসেছিলেনকৃষ্ণা কে আসতে দেখেই দাড়িয়ে  বললেন “কোথায়  যাওয়া হবে এখন দুজনের?”তড়িতে কৃষ্ণার চমক ভাঙে বোকার মত মানুষটার দিকে তাকায়।আবার সেই হাসি। রোম দারিয়ে যায় অমন বাচ্চাদের  মত হাসিটা দেখলে।“এই  তো  ওকে নিয়ে একটু ঘুরে বেড়াব এইখানেই। আপনি চিন্তা করবেন  না। ঠিক  সময়ে  আপনাদের   মেয়ে কে  ফেরত দিয়ে যাবো”।দুজনেই জুতো পরে বেরিয়ে যায় 

কৃষ্ণা যখন মানুষ  টা কে পেছন থেকে দেখেই যাচ্ছিল তক্ষুনি হটাত  মানুষ টা ঘুরে  দারিয়ে বলে,so many years, not even a single hug?অপ্রস্তুতের মত এগিয়ে  যায়। কিন্তু যা ভেবেছিল তাই। সেই আগের মতই মানুষটি গলে বেরিয়ে গিলে হেসে একটা ভেংচি  কেটে  দেয়। এতক্ষণে  কৃষ্ণার বিশ্বাস হয়, স্বপ্ন না, সত্যিয়ে সে অবশেষে তার অসম্ভব প্রিয়  মানুষটির সামনে দাড়িয়ে  আছে skype  আর জিমেইল এর ইমেজ টা এখন একটা রক্ত মাংসের মানুষ,ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড এর পার্থ এখন ওর দিকে হাসি  হাসি মুখে হাত টা  বারিয়ে এক সিঁড়ি নীচে দাড়িয়ে  আছেকৃষ্ণা ছোট্ট লাফ মেরে পার্থর কনুই   ধরে।
পার্থ এবং কৃষ্ণা, ফেসবুক বন্ধু। মিশিগান  ইউনিভার্সিটি র এক কনে বিশাল বড়  ল্যাব আর  এককোণায়  বসা কৃষ্ণার  দিন যেমন টি শুরু হয় তেমনিয়ে সেদিন হয়েছিল। প্রতিদিন সকালে এসে  কাজ শুরু করার আগে যেমন ফেসবুক চেক করে তেমনি করছিল। ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট  এ দেখল নতুন মুখ। mutual ফ্রেন্ড এও কেউ নেই। ভাবল reject করে দেয়। কিন্তু দিল না। কারণটি কি ছিল মনে পরে না ওর। শুধু দেখেছিল ছেলেটি কলকাতার কৃষ্ণা ভালনাম কৃষ্ণচূড়া চৌধুরী, বাঙ্গালি হলেও স্পর্শ পায় নি বাঙলার মাটির এই পঁচিশটি বসন্তে । ফেসবুক এর নিরানব্বই শতাংশ বন্ধুই  আমেরিকান এবং কাজের সূত্রেৃথিবীর   বিভিন্ন জায়গার। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও বাঙালি বন্ধু জোটে  নি। বিদেশে বড়  হলেও চমৎকার বাঙালি টানদুর্গাপূজা পছন্দ, পছন্দ শরৎচন্দ্র। সেই মেয়ের এখন বাঙালি বন্ধু নেই, বিশ্বাস করাটা কঠিন 
পার্থ দে  বিশাল বর সফটওয়্যার কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার । বিদেশে  যাবার সুযোগ  অনেক থাকা সত্ত্বেও দেশ ছেড়ে জেতে অপারগ।তাই দেশে সবচেয়েড়  প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে আরামে আয়েশে দিন কাটায়। ফেসবুক পোকা ঠিক নয়।কিন্তু সেদিন সার্ফ করতে করতে ক্কৃষ্ণচূড়াপ্রোফাইল গিয়ে আআন্মনেই কতকটা অ্যাড ফ্রেন্ড করে দিয়েছিল।তারপর  থেকেই শুরু হল ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড এ ওদের পথচলা ।

দিনের পর দিন নানান  কথা বলায় কেটে  যায়। প্রথমে ছবি দেখেই সন্তুষ্ট হতে হয়েছিল। একদিন জিমেইল ভিডিও তে দেখা। কাজের চাপে ,কখন অভিমান কথা হয়ত মাসের পর মাস বন্ধ।কিন্তু তাও যেন কোথায় একটা সূক্ষ্ম টান রয়ে যায় 
অবশেষে একদিন সুযোগ হয় কৃষ্ণার মানুষ টি কে  দেখার টান-যখন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উথল,অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একদিন ভারত   আসার প্লান বানিয়ে ফেলল মা কে  নিয়ে।জন্মভূমি দেখার বাহানা আর কি।

দেশে পা দিতেই অসম্ভব রোমাঞ্চ  শারা শরীর জুড়েএত কাছে এসে গেল ও? যেন পার্থের স্পর্শ  আকাশে বাতাসে। পার্থ  ছিল তখন কর্মসূত্রে ব্যাঙ্গালর  । গাড়ি ধরেছে  কলকাতা  পৌঁছানর। চারদিনের  ছুটি। সারে চার বছরের online বন্ধুত্বের যবনিকা পতন হবে। হবে মুখোমুখি দেখা । কেন জানিনা অদ্ভুত লাগছে কৃষ্ণার ।
“চল তোমায় কলকাতা  দেখাই”-পার্থের ডাকে ফিরে তকায় ও।নাহ  শহর   দেখার বিন্দুমাত্র ইছহে নেই ।আজ এত টা  পথ পাড়ি  দিয়ে এসেছে শুধু মানুষটার হাত ধরে হেঁটে যাওয়ার জন্য কি করে বোঝাবে।“চল যেখানে নিতে চাও”।
প্দুদিন যে  কি করে কেটে গেল অর সাথে সকাল বিকেল ঘুরে , নানা জায়গা দেখে। কথা ঠিক  মত বলা হয়ে ওঠেনি।ভিক্টোরিয়া এ  পাশে বসে  পার্থের কাঁধে মাথা রেখে  যখন আয়েশে চোখ বুজেছিল ও  ,তখন পার্থের ফিসফিস শুনল “ will u hold my hand, will u be mine forever?” চমকে তাকাল  পার্থের দিকে। ঠাট্টা করছে কি? নাহ, ঠাট্টার ত কন ছিনহই নেই মুখে। খুব  ভালভাবে দেখল । হটাত এ বুঝতে পারল সেই জীবনের সেই সন্ধিক্ষণ এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে virtual ওয়ার্ল্ড আর হাসি মশকরা চলে না। পার্থের বাড়ান হাত টা দেখে খুব লোভ হল। পার্থ তাকিয়ে ছিল নির্নিমেষে।
কিছুক্ষণ শুধু তাকিয়েই থাকে  কৃষ্ণা। পার্থ যা বলছে সে ত শোনার জন্য এতোগুলো বছর অপেক্ষা করে ছিল।মনের কোনও এক কোণে ওই শব্দগুলি শোনার জন্য কি আকুপাকু করত না? কিন্তু  আজ এ কি হল ওর ? বাড়িয়ে থাকা হাত যে  ওকে জীবনের সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে  ফেলল।
পার্থ মা বাবার একমাত্র  সন্তান। বাবা জীবিত নন।   মা আর ও।অনেক স্বপ্ন ওর মায়ের, ছেলে চাকরি করবে, অনেক বড় হবে আর তখন লাল  টুকটুকে বউ আনবে, নাতি নাতনি তে এত বছরের একাকীত্ব শেষ হবে। দু তিন টে বাইরে কাজ করার বড় অফারের  প্রত্যাখ্যান করার পেছনেও একটাই কারণ বারবার। মা যাবেন না বাইরে নিজের বাড়ি  ছেড়ে । দেশের মা টি  তেই , দেশের মানুষের সাথেই শেষ পর্যন্ত থাকতে চান। পার্থের ও কখন আপ্সস হয় না ।কৃষ্ণা দোষ  দিতে পারে না। কিন্তু পার্থ আর  ওর মায়ের ওই  সমীকরণ এর  সমান চিহ্নের কোন  পাশে তার অবস্থান সেটা এত বছর ভেবেও বের করতে না পেরে হাল ছেরে শুধু বন্ধুত্বে মন বসিয়েছিল। আমেরিকায় বর হয়ে ওঠা, আত্মনির্ভর carrear সচেতন কৃষ্ণার জন্য ইন্ডিয়ায়   সেটল  করা  অভাবনীয়...।চিন্তা করতে গেলেই উত্তর খুঁজে না পেয়ে হৃদয় এড়িয়ে যেত। যে প্রশ্ন নিয়ে আজ পার্থ তার দিকে তাকিয়ে সে প্রশ্ন কি এতগুলো বছর কৃষ্ণা নিজেকে করেনি?

“কি ভাবছেন madam? কথা বলব মায়ের সাথে?” ঠোঁটের কোনে এক চিলতে  হাসি নিয়ে  পার্থ ওর বাতাসে এলোমেলো চুল গুলো সরায় ।বাড়ান হাত এখন ওর হাতের মুঠোয়।কিন্তু ধরতে কেন পারছে না কৃষ্ণা শক্ত করে?
“ তোমার মা কে  কি আমেরিকা আসার জন্য বোঝানো যায় না?”  মাথা  নিচু করে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল কৃষ্ণা।
মুহুরতে হাত টা  আলগা হয়ে গেল। করুন দুটো চোখ তুলে কৃষ্ণা যখন তাকাল পার্থের দিকে তখন পার্থের ভরতশনা ভরা দৃষ্টি ছাড়া কিছুই দেখল না আর। যেন বলছে, সবকিছু জেনেও কি করে কৃষ্ণা ওকে ওই অনুরধ করল? মরমে মরে যায় কৃষ্ণা। দুচোখে শ্রাবণের ধারা।পার্থ উঠে দাড়ায় ।“চল, বাসায় ছেড়ে  আসি তোমায়”। কৃষ্ণার সাহস হয় না  অই হাত টা ধরে আর টানতে।

বালিশ ভিজে জবজবে। মোবাইল এ   মেসেজ আর টিং টিং শব্দে মুখ ফিরিয়ে অতি চেনা একটা নাম্বার দেখে  heartbeat প্রবল ।পার্থ ।“ কৃষ্ণা, অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমায় নিয়ে। ।কিন্তু আমি মনে হয় শুধু আমার জীবন কেই বড়  করে দেখছি। তোমার ইচ্ছে অনিচ্ছে দেখিনি।আজ মনে হল এত বড়  selfish কিকরে হলাম? আমি তোমাকে  চাই ।কিন্তু আমি পারব না মা কে  কষ্ট দিতে। আমায় ক্ষমা কর”।
মোবাইল টা কে  শক্ত করে বুক এ চেপে  ধরে হু হু করে কেঁদে ওঠে কৃষ্ণা।কেন এসেছিল ও একটা অসম্ভব স্বপ্ন ক তাড়া  করে এত দূর থেকে?নিজেকে খুব স্মার্ট মেয়ে ভাবত ।  আজ নিজেকে নিঃস্ব ছাড়া কিছু মনে হছহে না। মনে হছহে কেউ যেন ওকে ওর  শিকড় টেনে  উপড়ে ফেলেছে। প্রচণ্ড ইছহে করছিল নিজেকে বিলীন করে দিয়ে মানুষটার বুকে মিশে গিয়ে বলতে “ আমি এসেছি, আমি থাকব, চিরজীবন তোমার  হাত ধরে”। কিন্তু বাস্তবতা ........ .শূন্য চোখে জানার বাইরে তাকিয়ে থাকে কৃষ্ণা। আর একদিন দিন পরে ওর flight।